শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

আইপি টিভি লাগামছাড়া

স্বদেশ ডেস্ক:

অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে বিশ^ব্যাপী ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন বা আইপি টিভি শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। এটি ‘ওয়েব টিভি’ নামেও পরিচিত। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে টেলিভিশনের আদলেই সংবাদ-বিনোদনসহ নানা তথ্য-উপাত্ত প্রচার হচ্ছে। এগুলো ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। লাগামহীনভাবে চলা এসব আইপি টিভি দেশের মূলধারার গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কারণ অনেক আইপি টিভিই ব্যবহৃত হচ্ছে কিছু মানুষের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল ও চাঁদাবাজির মাধ্যম হিসেবে। এমন পরিস্থিতিতে আইপি টিভির নামে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তার লাগাম টেনে ধরতে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। এসব টিভির সাংবাদিক নিয়োগবাণিজ্য ও চাঁদাবাজি বন্ধে তথ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইপি টিভির অনুমোদনের জন্য প্রায় ৬শটি আবেদন জমা পড়েছে। এ ছাড়া আইপি রেডিওর আবেদন পড়েছে ৬০/৭০টি। তবে দেশে কোনো আইপি টিভিকে এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এগুলো কিভাবে চলবে, কারা চালাবে, লোকবল কেমন হবে, কী কী কনটেন্ট প্রচার করতে পারবে- তা নির্ধারণ করে নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। নীতিমালাটি এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। বিটিআরসি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৬১টি আইএসপি কোম্পানিকে আইপি টিভির অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

একজন কর্মকর্তা জানান, আবেদন যাচাইয়ের পর সেগুলো জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ ব্রাঞ্চের (এসবি) মাধ্যমে তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখায় পাঠানো হয়েছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করার তাগিদও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুযায়ী, আইপি/অনলাইন টেলিভিশন অনুমতি ছাড়া সংবাদ প্রচার করতে পারবে না। সুস্থ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারে বাধা নেই। আইন ভাঙলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে।

রাজধানীসহ সারাদেশে জেলা-উপজেলায় কয়েক হাজারেরও বেশি আইপি টিভি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইপি টিভির মালিকদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টরা জানান, এসব টিভিতে নিজেদের প্রচারের পাশাপাশি জেলা-উপজেলার বড় রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে এমপি-মন্ত্রীদের প্রচার চালানো হয় বেশি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের ছোটখাটো ঝুটঝামেলাকে পুঁজি করে তাদের জিম্মি করে টাকা আদায় করেন অনেক আইপি টিভির প্রতিনিধিরা। সরকারি-বেসরকারি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিউজ করার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন কেউ কেউ। রয়েছে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগও।

সাংবাদিক নিয়োগের নামেও রমরমা বাণিজ্য করেন কোনো কোনো আইপি টিভির মালিক। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি উপকমিটি থেকে পদ হারানো আলোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মালিকানাধীন আইপি টিভি ‘জয়যাত্রা টেলিভিশনের’ চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তিনি এই টিভির প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মাসে ৫/১০ হাজার করে টাকা নিত জয়যাত্রা টেলিভিশন। টিভিটি ইতোমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া যেসব আইপি টিভি সংবাদ প্রকাশের নামে চাঁদাবাজি ও মানুষকে হয়রানি করছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই কিছু আইপি টিভির অনুমোদন দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আইপি টিভির বিরুদ্ধে নানা সময় অভিযোগ আসে। সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেসব আইপি টিভি চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু আইপি টিভি অনেক সময় গুজব রটানোয় যুক্ত হয়, অসত্য তথ্য পরিবেশন ও ভাঁড়ামোতে লিপ্ত হয়। আবার দেখা যায় অনুমোদন পাওয়ার আগেই কেউ কেউ টেলিভিশন চ্যানেলের মতো অফিস খুলে বসেছে, জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দিচ্ছে। এসব বিষয় নিয়মনীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

মানতে হবে যেসব শর্ত

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নীতি অনুযায়ী, আইপি টিভি সেবাদানকারী সরকারের অনুমোদিত (অথবা বাংলাদেশে ডাউনলিঙ্কের অনুমতিপ্রাপ্ত) দেশি/বিদেশি টিভি চ্যানেলের কনটেন্ট প্রচার করতে পারবে, তবে প্রতিটি চ্যানেল বা প্রোগ্রাম বা কনটেন্ট প্রচারে প্রয়োজনীয় চুক্তি/অনুমোদন/ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে এবং অনুমোদিত চ্যানেল ব্যতীত অন্য কোনো চ্যানেল ডাউনলিঙ্ক, বিপণন বা সঞ্চালন বা নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রদর্শন বা সম্প্রচার করতে পারবে না। আইপি টিভি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করতে হলে বিটিআরসি থেকে ট্যারিফ অনুমোদন নিতে হবে। দেশের অখ-তা, সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পরিপন্থী কোনো ভিওডি (ভিডিও অন ডিমান্ড) প্রচার করতে পারবে না। হিংসাত্মক, সন্ত্রাস, বিদ্বেষ ও অপরাধসংবলিত কোনো ভিওডি, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য, শিক্ষা সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় সংহতি ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি পরিপন্থী কোনো ভিওডি প্রচার করা যাবে না। জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ হানিকর, কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীয় আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন কোনো ভিওডি প্রচার করা যাবে না। নগ্নতা, নগ্ন ছায়াছবি, যৌনক্রিয়ার ইঙ্গিত সূচক বা অশোভন দৃশ্য, উচ্ছৃঙ্খলতা, ধ্বংসযজ্ঞ, শিশু-কিশোরদের বিকাশে প্রতিবন্ধক ভিওডি প্রচার করতে পারবে না আইপি টিভি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877